নিজস্ব প্রতিবেদক-
গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার সরকারের ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাগুরা শহরের সৈয়দ আতর আলী গনগ্রন্থাগার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেছেন দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গন্যমাধ্যমে কাজ করা সাংবাদিক মোঃ মুক্তাদির রশীদ রোমিও। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যমের ভূমিকা ও প্রত্যাশা’ শিরোনামে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে মাগুরা জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক (এমজেএন)।
সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ বলেন, ‘আপনার (গনমাধ্যম কর্মী) কাজ হচ্ছে ক্ষমতাকে জবাবদিহি করা। তা না করে আপনি ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে সুবিধা নিচ্ছেন, তাঁদের অপকর্মের বৈধতা দিতে কাজ করেছেন। স্বৈরাচারের পক্ষে নানা রকম ফ্যাসিবাদী বয়ান তৈরি করেছেন প্রচার করেছেন। এভাবেই সাংবাদিকরা
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে’। এর থেকে বেরিয়ে না আসলে মানুষ গণমাধ্যম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে মনে করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার আলোচনা সভা শুরু হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আলোচনা সভায় খুব মানুষ উপস্থিত না হলেও আলোচনা চলে প্রায় তিন ঘন্টা। এসময় আলোচনা সভায় অংশ নেওয়া ব্যাক্তিরা জুলাই গণ অভ্যুত্থানে গনমাধ্যমের ভূমিকা ও প্রত্যাশা নিয়ে কথা বলেন। তাঁদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সাংবাদিক মুক্তাদির রশীদ। সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো না হইলে আপনাদের সাংবাদিক ভালো হবে না। আপনাদের প্রতিনিয়ত সাংবাদিকদের প্রশ্ন করে যেতে হবে। আপনাদের কথা সাংবাদিক না লিখলে তাঁকে বর্জন করতে হবে। আবার ভালো সাংবাদিকতার জন্য তাঁদেরকে সহযোগিতাও করতে হবে’।
আলোচনা সভায় এই সাংবাদিক আরও বলেন, তৃণমূল মানুষের কথা তুলে ধরতে স্থানীয় গনমাধ্যমের কোন বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন সামনের দিনে দেশের বড় গণমাধ্যম গুলো ভেঙে পড়বে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয়ভাবে গণমুখী গণমাধ্যম গড়ে তোলার উপরে জোর দেন।
সাংবাদিক কাজী আশিক রহমানের সঞ্চালনায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম। বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি জুলাই ও আগস্ট মাসের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ননা দেন। এসময় শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই কঠিন সময়ে আমরা সাংবাদিকদের তেমন কোন সহযোগিতাই পাইনি। এমনকি তাঁদেরকে যে কোন তথ্য দিতেও আমরা ভয় পেতাম। কারণে তাঁদের অনেকেই আমাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে সরবরাহ করতেন’। এই ছাত্রনেতা বলেন, আগামী দিনে সাংবাদিকদের এমন অপেশাদার চরিত্র আমরা কেউই দেখতে চাই না। আমরা চাই সাংবাদিকরা গন মানুষের কথা বলুক। নিপীড়িত নির্যাতিতদের পক্ষে থাকুক।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ডিবিসি নিউজ ও আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাংবাদিক ফয়সাল পারভেজ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রতিনিধি হেলাল হোসেন, এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজের প্রতিনিধি সুজন মাহামুদ, মোহনা টেলিভিশনের এইচ এন কামরুল ইসলাম, শিক্ষক রুহুল আমীন, আইনজীবী মাজহারুল ইসলাম সাগর, বাংলাদেশ কংগ্রেসের সদস্য কাজল ইসলাম, অধিকার কর্মী ফারহানা সুলতানা পম্পা প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আগামী দিনে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করার পক্ষে মত দেন বক্তারা। এছাড়া এ ধরণের আয়োজন আরও বেশি বেশি করতে এমজেএন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান তাঁরা। উক্ত আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে রাজনীতিবিদ শম্পা বসুর উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও ব্যাক্তিগত কারণে তিনি উপস্থিত হননি বলে জানান আয়োজকরা।
You cannot copy content of this page